বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩২ অপরাহ্ন
নিউজ ডেস্ক:
উত্তরাঞ্চলের শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত নাটোরের চলনবিলে চলছে বোরো ধান কাটা-মাড়াই। ঘরে ধান উঠলেও কৃষকের মনে নেই খুশির ছোয়া।
গত কয়েক দিন ধরে প্রায়ই হচ্ছে ঝড়-বৃষ্টি।
এতে মাঠের বেশিরভাগ ধান গাছ এখন পানির নিচে। এছাড়া কেটে রাখা বোরো ধান পড়ে থাকছে জমিতেই। ফলে শ্রমিকরা এসব ভেজা ধান বহন করতে পারছেন না। আবার সঠিক সময়ে মাড়াই করতে না পেরে ধানেরও ক্ষতি হচ্ছে।
এসবের মধ্যে আবার দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। এমনিতেই গত বছরের তুলনায় এবার শ্রমিকের মজুরি গুণতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। এবারে এক মণ ধানের দামেও মিলছে না একজন ধান কাটা শ্রমিক।
একদিকে যেমন দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট, অন্যদিকে বৃষ্টির কারণে যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চলনবিলের কৃষকরা। সঠিক সময়ে ঘরে ধান তোলা নিয়ে কৃষকের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ।
শনিবার (১৪ মে) জেলার সিংড়া উপজেলার চলনবিলে বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের এমন দৃশ্য। উপজেলার চকসিংড়া, শোলাকুড়া, বালুয়া-বাসুয়া, শেরকোল, নিংগইন, রাখালগাছা, তাজপুর, নওগাঁ, চৌগ্রাম, জামতলী, সাতপুকুরিয়া এলাকার কৃষকরা বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান।
চকসিংড়া মহল্লার কৃষক আব্দুস সোবাহান বলেন, শ্রমিকরা জমিতে ধান কাটলেও বৃষ্টির কারণে সেগুলো গোলায় আনতে পারেননি। ধান কেটে সেগুলো জমিতে রেখেই চলে গেছেন শ্রমিকরা। সেই ধান বহন করার জন্য পাঁচদিন ধরে শ্রমিক খোঁজার পর বেশি মজুরিতে মিলেছে শ্রমিক। কিন্তু এর মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে ধানের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে এবং পাকা ধানের অনেকাংশ ঝরে গেছে।
একই মত প্রকাশ করে সুকাশ ইউনিয়নের বনকুড়ইল গ্রামের নাজমুল হক বলেন, ধান কাটা-মাড়াই কাজে শ্রমিক মিলছে না। অনেক খুঁজে শেষ পর্যন্ত জন প্রতি ১ হাজার ১০০ টাকা দিন হিসেবে শ্রমিক পেয়েছি। এ জন্য এবারে বোরো ধান ঘরে তুলতে অনেক বেশি খরচ পড়ে যাবে।
কতুয়াবাড়ী এলাকার কৃষক সাজু আহমেদ বলেন, দিনে হাজার টাকা দিতে চাইলেও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এক মণ ধানের দাম পড়ে ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাও আবার সময় মতো ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া ভেজা ধান কিনতে চাচ্ছেন না ক্রেতারা।
তিনি বলেন, এবার ধান আবাদে খরচ অনেক বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় ফলন কম। এ বছর অনেকটাই লোকসান গুণতে হবে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বোরো ধানে ফুল আসার সময়েই কালবৈশাখী ঝড় হওয়ায় ধান গাছ নুয়ে মাটিতে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে বেশি ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে তড়িঘড়ি করে কাঁচা-পাকা ধান কাটা-মাড়াই শুরু করেন তারা।
কিন্তু তাতেও রয়েছে চরম বিপত্তি। শ্রমিক সঙ্কটের কারণে ধান কাটা-মাড়াই করা যাচ্ছে না। জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় শ্রমিকেরা ধান কেটে দিতে চাচ্ছেন না। আর যতটুকু করা হচ্ছে তাতে আবার চাষিদের খরচের পরিমাণই হচ্ছে বেশি। এতে লাভ তো দূরের কথা, লোকসান সামলানো নিয়েই দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় কৃষক সোরায়মান হোসেন বলেন, বাজারে ধানের দাম ভালো। কিন্ত সময়মতো ধান ঘরে তোলা নিয়েই দুঃশ্চিন্তা। কারণ, ধানের গাছ থেকে শীষ বের হওয়ার পরে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে অনেক কৃষকের ধান মাটিতে পড়ে গেছে। এরপর আবার বৃষ্টির কারণে অনেকের ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে রোদ হলে দু’একদিনের মধ্যে তা ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে মজুরি বেশি নেওয়ার বিষয়ে ধান কাটা শ্রমিকরা বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য মজুরি বেশি নিতে হচ্ছে। যেই টাকা পাই, তা দিয়ে চাল, ডাল, তেল কিনতেই শেষ। চালের দাম বেশি। তেল, মাছ, মাংসের দামতো নাগালের বাইরে।
কুষ্টিয়া থেকে আসা ধান কাটা শ্রমিক আফাল হোসেন বলেন, খুব ছোট থেকে বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটার কাজ করি। এর আগে যেই মজুরি পেতাম, তা দিয়ে সংসার চালানোর পরেও কিছু জমা রাখতাম। আর এখন যা পাই, তা দিয়ে সংসারই ঠিক মতো চলে না।
তিনি বলেন, ঝড়ে ধান মাটিতে নুয়ে আছে। তার ওপর বৃষ্টির কারণে একদম ভিজে গেছে। এজন্য ধান কাটা-মাড়াই করা যাচ্ছে না। তাই অধিকাংশ শ্রমিক চলে গেছেন।
সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সেলিম রেজা বলেন, চলতি মৌসুমে সিংড়ায় বোরো ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৩০০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পার হয়ে এবং ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়া বাজারে দামও সন্তষজনক।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৯০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। তবে শ্রমিকের সংকট দেখা দেওয়ায় কৃষকরা সমস্যায় আছেন। বর্তমানে বৈরী আবহাওয়ার কারণে দ্রুত ধান কেটে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।